জলবায়ু পরিবর্তন, দুর্যোগজনিত সমস্যা মোকাবিলায় সমন্বিত উদ্যোগ না নিলে নগরের পরিবেশ আরও খারাপ হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
“দুর্যোগ এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতি ব্যবস্থাপনা বিষয়ক জাতীয় কৌশলপত্রে প্রয়োজন স্থানীয় অবস্থার প্রতিফলন ” শীর্ষক এক সেমিনার গতকাল নগরীর স্থানীয় একটি রেস্তোরাঁয় অনুষ্ঠিত হয়। উন্নয়ন সংস্থা সমন্বিত সমাজ উন্নয়ন সংস্থা (আইসিডিএ) ও কোস্ট ট্রাস্টের যৌথ উদ্যোগে এবং আইসিডিএ’র আয়োজনে অনুষ্ঠিত সেমিনারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) তৌহিদুজ্জামান পাভেল প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
আইসিডিএ এর প্রধান উপদেষ্টা আনোয়ার জাহিদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনার আলোচকগণ বলেন, প্রাকৃতিক এবং মনুষ্যসৃষ্ট কারণে নদী ভাঙ্গন হয়। এর ফলে যারা জমি হারায় এবং কর্মহীন হয়ে যায়। তখন ভূমিহীন উদ্বাস্তু হয়ে শহরমুখী হয়। এর ফলে শহরের উপর চাপ পরে। তাই সেমিনারে দাবি জানানো হয়, স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা এবং নদী ভাঙ্গনের ফলে উদ্বাস্তুদের সঠিক তালিকা তৈরি করতে হবে।তাদের পুনর্বাসনের জন্য প্রকৃত ভূমিহীনদের মাঝে খাসজমি বন্দোবস্ত দিতে হবে। “পজিশন রাইট ” হস্তান্তর করা হবে না – এই মর্মে খাস জমি বন্টন করতে হবে। একই সাথে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দক্ষিনাঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের পুর্নবাসনের জন্য বরাদ্দ বাড়াতে হবে। ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার মানুষের অংশগ্রহণে মাধ্যমে প্রকল্প তৈরি করতে হবে। এছাড়া ন্যায্যতার ভিত্তিতে উদ্বাস্তু মানুষের জন্য একটি কমিশন গঠন করা প্রয়োজন।
‘বরিশাল শহরের দুর্বলতা বিশ্লেষণ ও সম্ভাব্যতা যাচাই’ শীর্ষক সমীক্ষা প্রতিবেদন অনুসারে বরিশালে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত (জীবন, জীবিকা ও সম্পদের) ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বছরে প্রায় ৮০ কোটি টাকা। যা বরিশালের মোট মূল্য সংযোজন উৎপাদনের ৬ শতাংশ। বরিশাল নগরের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতির মাত্রা কমানো এবং অভিযোজন সক্ষমতা বৃদ্ধির বস্তি এলাকায় বসবাসরত ঝুঁকিপূর্ণ জলবায়ু উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠীর জীবন উন্নয়নে এখনই উদ্যোগ নিতে সেমিনারে তাগিদ দেয়া হয়।
ম্যাপ নির্বাহী প্রধান শুভংকর চক্রবর্তীর সঞ্চালনায় সেমিনারের শুরুতে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন, কো-অর্ডিনেটর পার্টনারশিপ এ্যান্ড এডভোকেসি, সিজিআরএফ প্রকল্প কর্মকর্তা মোঃ সালেহীন সরফরাজ।
সেমিনারে আলোচনা করেন, জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রাশিদা বেগম, জেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, ইউসেফ বিভাগীয় প্রধান, এ এইচ তৌফিক আহমেদ, আইসিডিএ’র নির্বাহী প্রধান সালমা খান, ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের সমন্বয়ক সোহানুর রহমান, জেলা মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক পুষ্প চক্রবর্তী, এড. সুভাষ দাস নিতাই,বেলা’র জেলা সমন্বয়কারী লিংকন বায়েন প্রমুখ। এসময় বাস্তুচ্যুত ও জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এসময় বক্তারা সেমিনারে জলবায়ু পরিবর্তন সহনশীলতা অর্জনে দেশের জলবায়ু উদ্বাস্তুদের টেকসই এবং মর্যাদাপূর্ণ পুর্নবাসন করার উদ্দেশ্যে সরকারকে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতি ব্যবস্থাপনা বিষয়ক জাতীয় কৌশলপত্রে স্থানীয় অবস্থার প্রতিফলনের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
বরিশাল নগরে বরিশাল নগরে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের টেকসই এবং মর্যাদপূর্ণ পুনর্বাসন নিশ্চিতের পাশাপাশি উন্নয়ননীতিতে দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব অন্তর্ভুক্ত, ব্যক্তিগত ও যৌথ কিছু অভ্যাস পরিবর্তন, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা রক্ষা করা, উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কাজে সরকার ও নাগরিকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ বা নেতৃত্ব নিশ্চিত করার দাবি তোলেন।
বক্তারা বলেন, ভূসংস্থান, ভৌগোলিক অবস্থান এবং মানুষের অপরিকল্পিত কার্যক্রমের কারণে বরিশাল শহর জলবায়ু সম্পর্কিত ঝুঁকিতে রয়েছে। সাধারণত ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, পানির লবণাক্ততা বৃদ্ধি, অতিমাত্রায় ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলন ইত্যাদি কারণে বরিশালের অধিবাসীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বরিশালের প্রধান সমস্যা হলো মূল শহরের এবং নদী তীরবর্তী বস্তি এলাকার জলাবদ্ধতা। ১৫ বছর আগেও এই সমস্যা বর্তমানের মতো এতটা প্রকট ছিল না। সে সময় শহর এলাকার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার অংশ যেমন খাল ও পুকুরের পর্যাপ্ত বৃষ্টির পানি ধারণ ক্ষমতা ছিল। অতিরিক্ত বৃষ্টির পানি খালগুলোর মাধ্যমে কীর্তনখোলা নদীতে নিষ্কাশিত হতো। বর্তমানে বিভিন্ন কারণে খাল ও পুকুর ভরাট এবং খালের পানি বর্জ্য ফেলার কারণে খালগুলো এই ক্ষমতা হারিয়েছে।